ঢাকার কিছু দর্শনীয় বা পর্যটনস্থল

লালবাগের কেল্লা বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। সম্রাট আওরঙ্গজেব তার শাসনামলে লালবাগ কেল্লা নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রাসাদ দূর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তৎকালীন লালবাগ কেল্লার নামকরণ করা হয় আওরঙ্গবাদ কেল্লা বা আওরঙ্গবাদ দূর্গ। পরবর্তীতে সুবাদার শায়েস্তা খাঁনের শাসনামলে ১৬৮৪ খিষ্টাব্দে নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে দূর্গটি পরিত্যাক্ত হয়। সে সময়ে নতুন ভাবে আওরঙ্গবাদ কেল্লা বাদ দিয়ে লালবাগ কেল্লা নামকরণ করা হয়। যা বর্তমানে প্রচলিত।বর্তমানে (প্রেক্ষিত ২০১২) বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগ এই কেল্লা এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। প্রশস্ত এলাকা নিযে লালবাগ কেল্লা অবস্থিত। কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-

  • কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা
  • পরীবিবির সমাধি
  • উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ

আহসান মঞ্জিল

 আহসান মঞ্জিল পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ-র নামানুসারে এর নামকরণ করেন। এর নির্মাণকাল ১৮৫৯-১৮৭২ সাল।

জমিদার শেখ মতিউল্লাহ এটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করেন। ১৮৩৫ সালের দিকে বেগমবাজারে বসবাসকারী নবাব আবদুল গনির বাবা খাজা আলীমুল্লাহ এটা কিনে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। আহসান মঞ্জিলই ঢাকার প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য।

১৯৯২ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে এখন পর্যন্ত সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা ৪ হাজার ৭৭। এই রংমহলের ৩১টি কক্ষের মধ্যে ২৩টিতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ১৯০৪ সালের আলোকচিত্রশিল্পী ফ্রিৎজকাপের তোলা ছবি অনুযায়ী ৯টি কক্ষ সাজানো হয়েছে।

শহীদ মিনার

শহীদ মিনার ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থিত। প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছিল অতিদ্রুত এবং নিতান্ত অপরিকল্পিতভাবে। ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাত্রির মধ্যে তা সম্পন্ন করে।

শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম। সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি।

জাতীয় সংসদ ভবন

তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমান পাকিস্তান) জন্য আইনসভার জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণ শুরু হয় ১৯৬১ সালে। জাতীয় সংসদ ভবন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রধান ভবন। এটি ঢাকার শেরে-বাংলা নগর এলাকায় অবস্থিত। প্রখ্যাত মার্কিন স্থপতি লুই কান এটির মূল স্থপতি। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আটটি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনের পর গঠিত সংসদের অধিবেশনগুলি অনুষ্ঠিত হয় পুরনো সংসদ ভবনে, যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ঢাকা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট করে তেমন কিছু জানা যায় না। এ সম্পর্কে প্রচলিত মতগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপঃ ক) একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাক গাছ (বুটি ফুডোসা) ছিল। খ) রাজধানী উদ্বোধনের দিনে ইসলাম খানের নির্দেশে এখানে ঢাক অর্থাৎ ড্রাম বাজানো হয়েছিল। গ) ‘ঢাকাভাষা’ নামে একটি প্রাকৃত ভাষা এখানে প্রচলিত ছিল। ঘ) রাজতরঙ্গিণী-তে ঢাক্কা শব্দটি ‘পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে অথবা এলাহাবাদ শিলালিপিতে উল্লেখিত সমুদ্রগুপ্তের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ডবাকই হলো ঢাকা।